অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমককে ডিরেক্টরস গিল্ড কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর এবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো অভিনয়শিল্পী সংঘের পক্ষ থেকে।
চিত্রালীর পাঠকদের জন্য পুরো বিজ্ঞপ্তিটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
বিজ্ঞপ্তি
বিগত ২১.০৭.২৩ তারিখে ডিরেক্টরস গিল্ড এর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যা আমাদের বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে । দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড এর কাছ থেকে যা মোটেই আমরা প্রত্যাশা করিনা। যেহেতু সংবাদ সম্মেলনে টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘের নাম উচ্চারিত হয়েছে তাই প্রাসঙ্গিক কারনেই কিছু কথা আমাদের বলতে হচ্ছে। যা আমরা কখনোই সর্বসাধারনের সম্মুখে বলতে চাইনি!
প্রথমত ডিরেক্টরস গিল্ড একজন অভিনয়শিল্পীকে নিষিদ্ধ করবার অধিকার রাখে কিনা? যদি তারা তাদের সদস্যদেরকে রুকাইয়া জাহান চমককে কাজে না নেবার নির্দেশ দিতে চাইতো তবে তা সাংগঠনিক ভাবে করতে পারতো। তার জন্য সংবাদ সম্মেলনের প্রয়োজন ছিলো কিনা!!!
এটা খুবই সাধারণ বিষয় যে একটি পেশাদার সংগঠন শুধুমাত্র তার সংগঠনের সদস্য ছাড়া অন্য কোনো পেশার শিল্পী, কলাকুশলী বা ব্যাক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে পারে না ! নিতান্ত প্রয়োজন হলে সেই পেশার সংগঠনের সাথে আলোচনা করতে পারে।
সংগঠন কোন কোট কাচারী-আইন আদালত নয়। সংগঠনকে সদস্যরা ভয় পাবেনা-ভালোবাসবে-নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে। কেউ কেউ কখনো কখনো ভুল করতে পারে, অন্যায় করতে পারে। আমরা তাকে সংশোধন এর চেষ্টা করবো, সঠিক পথ বাতলে দেবার চেষ্টা করবো। কিন্তু কখনোই গলা টিপে ধরবো না।
ভুল শুধরে নেবার, সংশোধন হবার যথেষ্ট সময়, সুযোগ পাওয়া স্বত্বেও কেউ যদি সংশোধন না হয় তখন হয়তো সংগঠন কঠোর হতে পারে। তার আগে নয়।
ডিরেক্টরস গিল্ড এর সংবাদ সম্মেলনের তথ্য অনুযায়ী অভিনয়শিল্পী চমকের বিষয়ে টেলিপ্যাব, ডিরেক্টরস গিল্ড এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ আন্তঃ সাংগাঠনিক মিটিং করে। সেখানে নানান সিদ্ধান্ত নিয়েই আলোচনা হয়। নিষেধাজ্ঞা ও এর মধ্যে ছিলো। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে নাটকটি আটকে যেতো। চমক সকল সংগঠনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের ভুল অনুধাবন করে অনুতপ্ত হয়েছে এবং আমরা যে শাস্তি তাকে দিয়েছি সে তা মাথা পেতে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা প্রযোজক পরিচালক সহশিল্পীদ্বয় যারা অভিযোগ করেছেন তারা সকলেই এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। প্রযোজক আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেলেন। পরিচালক তার নাটক শেষ করতে পারছেন। এবং সহশিল্পীরাও চমকের অনুতপ্ত হওয়া ও দুঃখ প্রকাশ করাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এরচেয়ে ভালো আর কি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা সিদ্ধান্ত ঘোষনার পূর্বে তিন সংঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মিটিং থেকে বের হয়ে টেলিপ্যাব অফিসে আলাদা ভাবে বসে অভিযোগকারী সকলের সাথে কথা বলে তাদের প্রত্যাশিত চাওয়া সমুহ আমলে নিয়ে যৌক্তিকতা, বাস্তবতা ও কার্যকারিতার কথা বিবেচনা করে যে ৪টি সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গুলো চুড়ান্ত করলেন তা নিজ হাতে লিখেছেন ডিরেক্টরস গিল্ড এর অভিযোগ উপকমিটির আহ্বায়ক, গিল্ডের সহসভাপতি আশরাফুল আলম রন্টু এবং টেলপ্যাব সভাপতি মনোয়ার পাঠান একে একে ৪টি পয়েন্ট স্পস্টভাবে পুনরায় পড়ে শোনানোর পর এগুলো ঘোষনার জন্য সবাই মিটিংরুমে বসেন এবং টেলিপ্যাব সভাপতি এবং সভার সভাপতি গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো যখন ঘোষণা করেন তখন হঠাৎ করে ডিরেক্টরস গিল্ড এর সাধারণ সম্পাদক বলে উঠেন আমি আমার ইসি র সাথে কথা বলেছি, ইসি মানছে না, চমককে নিষিদ্ধও করতে হবে। তিন সংগঠনের মিটিং এ যেহেতু টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘ গৃহীত সিদ্ধান্তের সাথে একমত তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেও এই সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বিবেচিত হয়।
সভাপতি সহসভাপতির সিদ্ধান্তের সাথে একমত নন সাধারণ সম্পাদক এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় তখন সাধারণ সম্পাদকও উপস্হিত ছিলেন তখনও তিনি কথা বললেননা।খুবই নাটকীয় কায়দায় তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দর গ্রীহিত সিদ্ধান্তকে আমলে না নিয়ে বলে উঠলেন ঘোষণার সময়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
রুকাইয়া জাহান চমকের বিরুদ্ধে ডিরেক্টরস গিল্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা তাদের ব্যক্তিগত। এই সিদ্ধান্তের সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই- আমাদের সিদ্ধান্তে চমকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কোন কথা নেই।
টেলিভিশন মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন সমুহের একটি ফেডারেশন আছে- ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গেনাইজেশন (FTPO) যার সদস্য টেলিপ্যাব, ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয় শিল্পী সংঘ সহ সবাই। FTPO র গঠনতন্ত্রে আছে, সংঠনগুলোর মধ্যে কোন বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারলে বা কোন জটিলতা তৈরী হলে তা ফেডারেশন এর মাধ্যমে সমাধান করা হবে। টেলিপ্যাব ও অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ এর সাথে ডিরেক্টরস গিল্ড একমত না হতেই পারে সেক্ষেত্রে তারা এফটিপিও এর কাছে সমাধান চাইতে পারতো। তা না করে তাদের সরাসরি প্রেস কনফারেন্স এ চলে গেলেন।
আমরা কোনও পাল্টা কনফারেন্স করছি না। এমনকি এই কথাগুলো ও আমরা বলতে চাইনি।কিন্তু বাধ্য হলাম। বছরের পর বছর ধরে অনেক পরিচালকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে আছে এবং এগুলার প্রতিকারের কোন কার্যকর ব্যবস্হা গ্রহনের কোন উদ্যোগ ডিরেক্টরস গিল্ডের নেই।
আমরা আমাদের অভিভাবক ফেডারেশন এফটিপিও এর সভাপতি মামুনুর রশিদ ও সাধারন সম্পাদক সালাউদ্দিন লাভলুর সাথে কথা বলেছি, সভাপতি মহোদয় দেশের বাইরে থাকায় আগামী ১লা সেপ্টেম্বর অনস্ঠিতব্য FTPO র সভায় এই এবিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করি এফটিপিও একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান দেবেন।
দীর্ঘ দিন ধরে আমরা সবগুলো সংগঠন পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে অনেক বড় বড় সংকট মোকাবেলা করে এসেছি। এই সামান্য বিষয়ে এই পরিস্থিতি সত্যই দুঃখজনক এবং বিব্রতকর।
ধন্যবাদ ।।।
এম এস কে সানজিদ খান প্রিন্স
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
টেলিপ্যাব
প্রাণ রায়
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ