সিনেমার সৌন্দয্য বিকাশে নায়ক-নায়িকার বাহিরেও বেশ গুরুত্ববহন করেন পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। হলিউড-বলিউডেই বেশিরভাগ সময় দেখা যায় এই চরিত্রের গুরুত্ব। বাংলা সিনেমায় কিছুটা নিভু নিভুই থাকেন পার্শ্বচরিত্রটি। তবে ব্যতিক্রম ঘটেছে এবারের ঈদের সিনেমায়, নজর কেড়েছেন পার্শ্বচরিত্রের অভিনয়শিল্পীরাও। ঈদে মুক্তি পাওয়া প্রায় সব সিনেমাতেই ছিল পার্শ্বচরিত্রের দারুণ উপস্থিতি। জেনে নেওয়া যাক পার্শ্বচরিত্রে আলো ছড়ানো ৭ অভিনয়শিল্পীর কথা।
শহীদুজ্জামান সেলিম
গত কয়েক বছর বড় পর্দায় নিয়মিত শহীদুজ্জামান সেলিম। দুর্দান্ত অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু অনেক সময়ই তার চরিত্রগুলো একই রকম হয়ে যায়। এবারের ঈদের তিনটি সিনেমায় ‘বরবাদ’, ‘দাগি’ ও ‘জংলি’তে দেখা গেছে এই অভিনেতাকে। এর মধ্যে তাকে ‘বরবাদ’ ও ‘জংলি’তে দেখা গেছে আইনজীবীর ভূমিকায়। ‘বরবাদ’-এর চরিত্রটিতে ছোট্ট হলেও দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছেন তিনি। তবে ‘জংলি’তে তার চরিত্রটি আইনজীবী থেকে হঠাৎ খলনায়কে রূপ নেয়।
‘দাগি’তে নির্মাতা শহীদুজ্জামান সেলিমকে দেখা গেছে ভারতীয় চোরাকারবারির চরিত্রে। হিন্দি-বাংলা মেশানো সংলাপ মিলিয়ে খলচরিত্রে তিনি বেশ মানিয়ে গেছেন।
সুনেরাহ বিনতে কামাল
‘দাগি’ সিনেমার সবচেয়ে বড় চমক ছিলেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। কথা বলতে না-পারা তরুণী লিখনের চরিত্রে তিনি অসাধারণ কাজ করেছেন। শুধু অভিব্যক্তি দিয়ে কিছু না বলেও অনেক কথা বলে গেছে তার চোখ। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার যে তিনি এমনি পাননি, সেটা প্রমাণ করেছেন সুনেরাহ। ‘অন্তর্জাল’-এর গ্ল্যামারাস চরিত্র থেকে ‘দাগি’র ‘লিখন’ হওয়া, সুনেরাহর ক্যারিয়ারে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
রাজীব সালেহীন
‘দাগি’তে আফরান নিশোর বন্ধু বাবুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজীব সালেহীন। এই চরিত্রটি বলা যায় পুরোপুরি বাস্তব জীবন থেকে তুলে আনা।
বলা যায় সবার জীবনেই একজন করে ‘বাবু’ থাকে যে খারাপ, ভালো সব সময়ই বন্ধুকে আগলে রাখে। মফস্সল শহরের তরুণ বাবুর চরিত্রে রাজীব সালেহীনের কাস্টিংকে যথাযথ বলছেন সিনেমা বিশ্লেষকরা।
স্যাম ভট্টাচার্য
‘জিল্লু, মাল দে’ সংলাপটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভারতীয় অভিনেতা স্যাম ভট্টাচার্য। ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন এই সংলাপের মাধ্যমে। ‘বরবাদ’ সিনেমাটিতে শাকিব খানের ব্যক্তিগত সহকারী ‘জিল্লু’ চরিত্রে দেখা গেছে তাকে।
জিল্লু চরিত্রটির সঙ্গে শাকিব অভিনীত চরিত্র আরিয়ান মির্জার পর্দার রসায়নও পুরোপুরি জমে গেছে। সব মিলিয়ে সিনেমা শেষ হওয়ার পরও চরিত্রটি দর্শকের মনে রেখেছে দর্শক।
সুমন আনোয়ার
খলচরিত্র গন্ডার বাবু হিসেবে সুমন আনোয়ারের উপস্থিতি ছিল চমকপ্রদ। ‘চক্কর’ সিনেমায় উজ্জ্বল নামে ছিলেন তিনি। ঠান্ডা মাথার চরিত্র ও পরিমিত সংলাপে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছেন এই নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী। লঞ্চে মোশাররফ করিমের সঙ্গে তার একটি টক্কর আছে, সে দৃশ্যটিও হয়েছে দেখার মতো। পর্দায় মোশাররফ আর সুমন আনোয়ারের দ্বৈরথ জমে উঠেছিল।
নৈঋতা হাসিন রৌদ্রময়ী
সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’ মূলত বাবা-মেয়ের গল্প। এখানে সিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছে ছোট্ট নৈঋতা। পাখি নামের ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে সে ছিল সাবলীল।
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খাবার কুড়িয়ে খাওয়া, জংলির ঘরে গিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসা—এমন কিছু দৃশ্য চোখে লেগে থাকে। শেষ দিকে এই পাখির জন্যই চোখের পানি আটকে রাখতে পারেন না দর্শক।
রাশেদ মামুন অপু
রাশেদ মামুন অপুকে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সিনেমা ও সিরিজে খলচরিত্রে দেখা গেছে যার বেশির ভাগই মনে রাখার মতো না। কিন্তু ‘দাগি’ সিনেমায় তাকে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন নির্মাতা। তার ক্রূর হাসি আর চোরা চাহনি ভয় ধরিয়ে দেয়। একই কথা প্রযোজ্য ‘জংলি’ সিনেমার ক্ষেত্রেও। ভাইরাল সাংবাদিক চরিত্রটি ছোট হলেও এতে ছাপ রাখার মতো অভিনয় করেছেন রাশেদ মামুন অপু।