ঢাকাই সিনেমার একসময়কার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাইনা শিকদার বনশ্রী আর নেই। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছোট ভাই মোহাম্মদ হারুন।
১৯৭৪ সালের ২৩ আগস্ট মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভার গুয়াতলা এলাকায় বাবা মজিবর শিকদার ও মা সবুরজান রিনা বেগমের ঘরে জন্ম নেন বনশ্রী। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সিনেমায় অভিষেকের পর দ্রুতই জনপ্রিয়তা পান তিনি। সুভাষ ঘোষ পরিচালিত মহা ভূমিকম্প সিনেমায় মান্না ও আমিন খানের বিপরীতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। নায়ক রুবেলের সঙ্গেও জুটি বেঁধে কাজ করেছিলেন। অল্প সময়ে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যাওয়া এই নায়িকার জীবনে হঠাৎ নেমে আসে অন্ধকার।
রূপালি পর্দার নায়িকা বনশ্রী জীবিকার তাগিদে ফুল বিক্রি করতে বাধ্য হন। রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠা এই অভিনেত্রী একসময় হয়ে পড়েন হতদরিদ্র। করোনাভাইরাসের সময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কাছ থেকে ত্রাণ নিতে দেখা যায় তাকে। এর আগেও, ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়ী তহবিল পান তিনি, যা কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল তার জীবনে।
শেষ বয়সে বনশ্রী থাকতেন শিবচরের মাদবরেরচরের সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। আলো-ঝলমলে পর্দা থেকে শুরু করে জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত তার পথচলা যেন এক অসমাপ্ত গল্প হয়েই থেকে গেল।
১৯৯৪ সালে ‘সোহরাব-রুস্তুম’ সিনেমার মধ্য দিয়ে রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে ব্যবসায় সফল হয় ছবিটি। পরিচিতি পান বনশ্রী। এরপর আরও ৮ থেকে ১০টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। নায়ক মান্না, আমিন খান, রুবেলের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন বনশ্রী। রুপালি পর্দার মতো জীবনও হয়ে উঠে রঙিন।
জীবনকালে এক সাক্ষাৎকারে বনশ্রী জানিয়েছিলেন, একসময় বিটিভিতে আবৃত্তি করতেন। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতিমনা ছিলেন। উদীচী গণসাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অভিনয় শেখেন সুবচন নাট্য সংসদে। অভিনয় শেখা থেকেই চলচ্চিত্রে কাজের টান তৈরি হয়। এরপর সুযোগ আসে। অভিনয় করেন ‘সোহরাব-রুস্তম’ সিনেমায়। বেঁচে থাকতে বনশ্রী বলেছিলেন, ‘৯০ দশকে বাংলা সিনেমার জয়-জয়কার ছিল। বিনোদনের মধ্যে বিটিভি আর ছিল সিনেমা হল। সে সময় ১০টির মতো সিনেমায় কাজ করেছি। “নেশা”, “মহা ভূমিকম্প”, “প্রেম বিসর্জন” ও “ভাগ্যের পরিহাস” ছবিতে একটানা কাজ করি। নায়ক মান্না ও রুবেলের সঙ্গে অভিনয় করেছি। তবে চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার পরই আর্থিক অনটনে পড়ি। শাহবাগে একসময় ফুলের ব্যবসায়ও করেছি। বাসে বাসে হকারিও করতে হয়েছে তিন বেলা খাবার জুটাতে।’