কলকাতার টিভি চ্যানেল জি বাংলার ‘সারেগামাপা লেজেন্ডস’-এর মঞ্চে ‘নয়ন সরসী কেন ভরেছে জলে’ গেয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ব্যোমকেশ থেকে ‘কাজলে’ লেখা কত কিছুর এই যাত্রার টানে তিনি এবার নিজেই তৈরি করলেন ব্যান্ড। একেবারে নব্বই দশকের মত বন্ধুদের নিয়ে এই ব্যান্ডটি। ব্যান্ডের নাম রাখা হয়েছে ‘হুলিগানিজম’। অনির্বাণ ছাড়াও এ ব্যান্ডে রয়েছেন সংগীত পরিচালক শুভদীপ গুহ, নেতা-গায়ক দেবরাজ ভট্টাচার্যসহ আছেন মোট নয় জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুশ্রুত, সোমেশ্বর, কৃশানু, নীলাংশুক, প্রীতম প্রমুখ।
ব্যান্ডের নাম নিয়ে খুব বেশি কিছু জানা না গেলেও, বোঝাই যাই নামটির মাঝে ডাকাবুকো ধরনের ব্যাপার আছে। এমন একজন ব্যক্তি যার মাঝে আছে দাপটের সাথে নিজের মতামত জাহির করার প্রয়াস।এটি হল রুফিয়ান এবং হুডলামের সমার্থক। হৈচৈ ফেলে দেওয়ার মত অবস্থা থেকেও শব্দটি আসেত পারে বলে গবেষণা করছেন নেটিজেনরা। আর সেখান থেকেই হলো হুলিগানিজম।
মঞ্চে গাওয়ার দীক্ষা ও অভিজ্ঞতা আগে থেকেই ছিল অনির্বাণের। গণমাধ্যমে অনির্বাণ জানান, মায়ের উৎসাহেই সংগীতে হাতেখড়ি তার। আর সেটা চর্চা করার সুযোগ পেয়েছেন মঞ্চে অভিনয় করতে গিয়ে। তিনি জানান যে তার মায়ের ইচ্ছা ছিল তিনি একজন পেশাদার গায়ক হবেন। কিন্তু গান নয়, অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল তার। খেলাধুলার দিকেও আগ্রহ ছিল। কলকাতায় এসে মঞ্চনাটকের দলে যোগ দিয়েছিলেন নিজের ইচ্ছা পূরণ করার আকাঙ্খায়। প্রোডাকশনের প্রয়োজনে সেখানে একজন সংগীত শিক্ষক ছিলেন। সেখান থেকেই সংগীতের তালিম নেন অনির্বাণ। তবে তিনি অকপটে বলেন, ‘আমি কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারি না।’
গায়ক অভিনেতা হিসেবে এর আগে পরমব্রতকে নিয়মিত মঞ্চে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দর্শক-শ্রোতা। এছাড়াও কলকাতার তারকারা অনেকেই গান- অভিনয়-নাচ একসাথে করেন নিয়মিতভাবে। সেই ধারাতে এই অভিনেতার সংযোজন নতুন অধ্যায়ই বটে।
মঞ্চ থিয়েটার থেকে সিনেমার তারকা বনে যাওয়া অনির্বাণ সংগীতশিল্পী হিসেবে ব্যাপক প্রশংসা পান ২০১৯ সালে। ঐ বছর মুক্তি পাওয়া সৃজিত মুখার্জির পরিচালিত ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ সিনেমায় ‘কিচ্ছু চাইনি আমি’ গানে কণ্ঠ দিয়ে। অনুপম রায়ের সঙ্গে গেয়েছেন ‘মাইকেল-বিদ্যাসাগর সংবাদ’। নিজের পরিচালিত ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ সিনেমায়ও অনির্বাণের কণ্ঠে রয়েছে গান।
সংগীতশিল্পী হিসেবে আরও কয়েকটি সিনেমার ক্রেডিটে রয়েছে তার নাম। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান গেয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এবার বাংলা ব্যান্ডে নতুনভাবে অভিনেতাকে পেতে চলেছেন দর্শক-শ্রোতা।
অভিনয়ের পাশাপাশি গানে- সুরে- তারে আবারও তিনি মুগ্ধ করবেন বলে এখনই বলাবলি করছেন নেটিজেনরা।
সম্প্রতি আরজি কর হত্যাকাণ্ডে অনির্বাণের মৌনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তার স্ত্রী মধুরিমা জানান- সকলের প্রতিবাদের ভাষা এক নয়। ফলে সবাইকে একসাথে দেখা যাবে এমনও নয়। তবে তার মাঝে প্রতিবাদের আগুন আছে তা বোঝা যায়, ‘আমি অন্য কোথাও যাব না, আমি এই দেশেতেই থাকব’ গানে তার অংশগ্রহণ নিয়ে। একসময়ে এনআরসি বিলের প্রতিবাদে তৈরি এই গানে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কণ্ঠও শোনা গিয়েছিল।
২০১৩ সালে কলকাতা টাইমসের বিচারে শীর্ষ দশ সুদর্শন পুরুষের তালিকায় থাকা অনির্বাণ এখন থেকে গানে গানেও সব প্রশ্নের জবাব দেবেন সেই আশাই করছেন তার ভক্তরা।