বিশৃঙ্খলতা, হাতাহাতি-মারামারি ও স্বজনপ্রীতিসহ একাধিক অভিযোগের পর আপাতত স্থগিত সেলিব্রিটি ক্রিকেট লীগ।
বিনোদন জগতের তারকাদের হাতে ব্যাট বল। ক্রিকেট খেলোয়াড় হয়ে খেলছেন ক্রিকেটের ময়দানে। এমন দৃশ্য খুব কমই চোখে পড়ে। তাই সেলিব্রিটি ক্রিকেট লীগ (সিসিএল) নিয়ে ভক্ত ও অনুরাগীদের উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশাও ছিল অন্য রকম। কিন্তু স্টেডিয়ামে ঘটলো অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তারকাদের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি হয়ে আপাতত বন্ধই হয়ে গেলো এই ক্রিকেট লীগ!
মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় সেলিব্রিটি ক্রিকেট লীগ। যেখানে দেশের জনপ্রিয় তারকারা খেলছিলেন ক্রিকেট। আসরের দ্বিতীয় দিন চলছিল দীপংকর দীপন ও মোস্তফা কামাল রাজের দলের ম্যাচ। সেই খেলায়ই সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলতার। তাই সংবাদ সম্মেলন করে তৃতীয় ও শেষ দিনের খেলা স্থগিত করার ঘোষণা দেন আয়োজক কমিটি। খেলা আবার কবে হবে তা পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
একই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যারা ঐ আয়োজনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থাও। আয়োজক কমিটি ছাড়াও এই ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন সেদিনের ম্যাচের দুই দলের ক্যাপ্টেন দীপংকর দীপন ও মোস্তফা কামাল রাজ।
২৯ সেপ্টেম্বর ম্যাচ চলার সময় স্লেজিং এক পর্যায়ে মারাত্মক রুপ ধারণ করে। দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হয় হাতাহাতি। অভিযোগ ওঠে, এতে আহত হন দীপনের দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। পরে আহত খেলোয়াড়দের ভর্তি করা হয় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিকস হাসপাতালে। এই তারকা খেলোয়াড়রা হলেন অভিনেত্রী রাজ রিপা, অভিনেতা জয় চৌধুরী, শিশির সরদার, আতিকুর রহমান, শেখ শুভ ও আশিক জাহিদ।
অভিযোগে বলা হয়, খেলা চলাকালীন দীপনের টিমের খেলোয়াড়দেরকে শুরুতে রাজের টিমের সমর্থকরা উসকানি দেয়। এরপর দীপনের টিমের এক খেলোয়াড়কে মাঠ থেকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করা হয়। এতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন দীপনের টিমের সদস্যরা, ঘটে চেয়ার ছোড়াছুড়ির মত ঘটনাও। যা রুপ নেয় মারামারির ও হাতাহাতির পর্যায়ে।
দীপনের টিমের খেলোয়াড় ও অভিনেতা মনির হোসেন শিমুলের ভাষ্যমতে, “তারা বাইরে থেকে লোকজন এনে আমাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরনের সিসিএল খেলা?”
একই দলের খেলোয়াড় ও অভিনেত্রী রাজ রিপার ভাষ্যমতে, “সকাল সাড়ে ১২টায় খেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেখানে রায়হান রাফী এসে বলছে— আমাদের দলের এই প্লেয়ার খেলতে পারবে না, ওই প্লেয়ার খেলতে পারবে না। সেকারণে আমাদের গ্রুপের খেলাটা অফ হয়ে যায়। সাড়ে তিন ঘণ্টা আমরা ওয়েট করি। ওদের মিটিং শেষে আমরা খেলতে নামি। ওদের রুলস অনুযায়ী খেলার মাঠে নামি। রায়হান রাফীর দল হেরে গেছে আমাদের কাছে।“
অভিনেত্রী আরও যোগ করেন, “যখন মোস্তফা কামাল রাজ ভাইয়ের টিমের সঙ্গে খেলবো তখন তারা আবার আমাদের খেলোয়াড়দের নিয়ে আপত্তি জানায়। এটা তো খেলার নিয়ম না। আমাদের গ্রুপে কে খেলতে পারবে কি পারবে না— এটা দীপঙ্কর দীপন দাদাই ঠিক করবে। মানে আপনারা বুঝতেছেন, পুরো সিসিএলের ম্যানেজমেন্টটা চরকির (ওটিটি প্ল্যাটফর্ম) সিন্ডিকেটের হাতে। তারা থ্রেট দিছে খুন করবে। শরিফুল রাজ ভাই পানির বোতল মেরে আমার বলছে, ক্যারিয়ার শেষ করে দেবে। ওর মতো মাতাল আমাদের ক্যারিয়ার শেষ করে দেবে!”
অপরদিকে, রাজের দলের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। দীপনের দলের খেলোয়াড়রাই প্রথমে তাদের ওপর চড়াও হয়েছেন বলে জানান তারা। রাজের দলের একজন সমর্থক ও নির্মাতা নিয়ামূল বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে চেয়েছিলাম খেলা চলুক। সেইভাবে আমাদের দল খেলে জিতেছে। হাতাহাতির ঘটনায় আমাদের টিমের সঙ্গে কথা বলে পরে মতামত জানাব।“
প্রসঙ্গত, সিসিএলে শোবিজের বিভিন্ন তারকারাসহ কলাকুশলীদের ভাগ করা হয় মোট আটটি দলে। প্রতিটি দলই গঠন করা হয় নারী ও পুরুষ উভয় তারকাদের মিলিয়েই। আর দলগুলোর নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় গিয়াসউদ্দিন সেলিম, সালাহউদ্দিন লাভলু, শিহাব শাহীন, চয়নিকা চৌধুরী, দীপংকর দীপন, সকাল আহমেদ, মোস্তফা কামাল রাজ ও রায়হান রাফীকে।