‘আমাকে উপদেষ্টা করা এখন সময়ের দাবি’- একবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই স্ট্যাটাস পোস্ট করেছিলেন দর্শক নন্দিত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সেই সময় নিছক মজার ছলেই উপদেষ্টা হওয়ার কথা লিখলেও তা-ই এবার বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে তার শপথ গ্রহণের পর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে নতুন আলোচনা-সমালোচনার।
পরিচালক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে ফারুকীর যোগ্যতা নিয়ে কারো সন্দেহ না থাকলেও, উপদেষ্টা হিসেবে তিনি কতটুকু যোগ্য, এবার তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা। সমালোচকদের অনেকেই মনে করছেন, এ পরিচালককে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ তাদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব থাকা ছাড়া বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত শাসনামলের বিরুদ্ধে তিনি তেমন কোনো ভূমিকা পালন করেননি।
একজন নেটিজেনের মন্তব্য অনুযায়ী, ‘ফারুকী একদিকে চলচ্চিত্রের জন্য প্রশংসিত, কিন্তু তার রাজনৈতিক অবস্থান কখনোই স্পষ্ট ছিল না। কীভাবে একজন চলচ্চিত্রকার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে পারেন, যখন তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার নয়?’
এদিকে ফারুকী যে তার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সব সময় তুলে ধরেছেন, এই ব্যাপারেও সন্দেহ নেই অনেক নেটিজেনদেরই। তবে সেই ভূমিকা রাজনীতি এবং ক্ষমতার বিরুদ্ধে এ পরিচালকের কোনো সরাসরি অবস্থান হিসেবে গণ্য করতে পারছেন না তারা। তাদের মতে, ফারুকীর পূর্ববর্তী অবস্থান তাকে কেবল একজন সমালোচক রূপেই পরিণত করেছে।
ফারুকীর উপদেষ্টা হওয়ার বিষয়টি নেটিজেনদের একপক্ষ নেতিবাচকভাবে দেখলেও, তাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন অন্তর্জালের আরেক পক্ষ। ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করে এই পক্ষের মাঝে আলোড়ণ সৃষ্টি করেছেন ফারুকী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শুভকামনা জানাচ্ছেন এই পরিচালককে। এ তালিকায় বেশি দেখা যাচ্ছে সংস্কৃতিমনা নেটিজেন ও বিনোদন জগতের মানুষদের।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ফারুকী গ্রহণ করায় এই পক্ষ মনে করছেন, দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং শিল্পের প্রচারের ক্ষেত্রে নতুন এ উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পাওয়ায় ফারুকীকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে তার স্ত্রী ও অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাকে। স্বামীর শপথ গ্রহণের একটি ভিডিও ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।
তিশা ছাড়াও বিনোদন অঙ্গনের অনেকেই আছেন এই তালিকায়। সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য ও নির্মাতা খিজির হায়াত খান লিখেছেন, ‘যাক, অবশেষে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা উপদেষ্টামণ্ডলীতে স্থান পেলেন। আপনার নতুন পথচলায় শুভকামনা ফারুকী ভাই।’ আরও অভিনন্দন জানিয়েছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, মডেল ও অভিনেতা ইমতু রাতিশ, আহসান কবির, নির্মাতা ও সাংবাদিক শামীম শাহেদ, গায়িকা এলিটা করিম, অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়া প্রমুখ।
এদিকে শপথ নেওয়ার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ফারুকী বলেন, ‘এটা আমার জন্য এক ধরনের অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। কারণ আমি কখনোই কোনো পদ কিংবা চেয়ারে বসবো ভাবিনি। তবে প্রফেসর ইউনূসের সহকর্মী হওয়াটা বেশ লোভনীয়, না বলাটা মুশকিল।’ তার দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন উদ্যোমে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
এছাড়াও ভক্ত ও সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ফারুকী বলেন, ‘আমি যদি কোথাও কোনো ভুল করি, আশা করি আপনারা সেটা ধরিয়ে দেবেন। আমি সেটা খুশি মনে গ্রহণ করবো।’
অর্থাৎ, ভুল হলে শুধরে দেওয়ার দায়িত্ব ফারুকী ইতিমধ্যেই দিয়েছেন জনগণকে। আর জনগণও তাদের বাক-স্বাধীনতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের মতামত পোষণ করতে শুরু করেছেন। ফারুকীর শপথ গ্রহণ এবং নেটিজেনদের সমালোচনা নিয়ে পরবর্তী সময়ে আরও আলোচনা এবং বিশ্লেষণ আসবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে সবার মূল লক্ষ্য একটিই, তা হলো- ‘গঠনমূলক উন্নয়ন’। এবার সময়ই বলে দিবে, এই উন্নয়নের পরিধির বিস্তার হয় কতদূর…
লেখা: রাহনামা হক