২৫ বছর বয়সী আলোকচিত্রী ফাতিমা হাসুউনা। তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দা। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে গাজাবাসীর ওপর চালানো ইসরাইলি নৃশংসতা ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন তিনি। তাও প্রায় ১৮ মাস ধরে।
গত ১৭ এপ্রিল বুধবার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তর অংশে নিজ বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। এ হামলায় একইঙ্গে তার পরিবারের আরও ১০ সদস্যও নিহত হন। ফাতিমার জীবনের পথ থেমে গেলেও, থেমে যায়নি তার গল্পের পথচলা।
এ ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যে ফাতিমার একটাই চাওয়া ছিল– তার মৃত্যু যেন নৈঃশব্দে না হয়; তিনি যেন নীরবে চলে না যান। পৃথিবী জানুক তিনি চলে গেছেন।
ফ্রান্সের ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের এসিয়াইডি’তে প্রদর্শিত হবে তাকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইলে ফাতিমা লিখেন, ‘আমি মরলে, আমার সেই মৃত্যু যেন গর্জে ওঠে। আমি যেন শুধু একটুখানি খবর বা কোনো সংখ্যায় পরিণত না হই। আমি চাই এমন এক মৃত্যু, যা দাগ কেটে যাবে সময়ের বুকে, যার ছবি কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।’
গত বুধবার উত্তর গাজায় নিজ বাড়িতে বিয়ের একদিন আগে ২৫ বছরের ফাতিমা ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। সঙ্গে মারা গেছেন গর্ভবর্তী বোনসহ তার পরিবারের আরও ১০ সদস্য।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর দাবি, তাদের নাগরিক ও সেনাদের ওপর হামলায় জড়িত এক হামাস সদস্যকে লক্ষ্য করে তারা এ হামলা চালিয়েছে।
ফাতিমার মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে ঘোষণা আসে যে, তাকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে ফ্রান্সের একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসবে, যা কান চলচ্চিত্র উৎসবের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয়।
ইরানি নির্মাতা সেপিদেহ ফারসি নির্মিত সেই প্রামাণ্যচিত্রের নাম ‘পুট ইউর সৌল অন ইওর হ্যান্ড এন্ড ওয়াক’। এতে ফারসি ও ফাতিমার ভিডিও কথোপকথনের মাধ্যমে গাজার জীবন আর যুদ্ধের ভেতর মানুষের টিকে থাকার গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
ফারসি এটাকে বর্ণনা করছেন, ‘ফাতিমা যেন গাজায় আমার দৃষ্টিতে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অগ্নিকন্যা, পূর্ণ ছিলেন জীবনে। আমি তার হাসি-কান্না, আশা ও নৈরাশাকে ফ্রেমবন্দি করেছি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান’।
ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবনযাপন করা ফারসি বলেন, তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে ফাতিমাকে একজন আলোকচিত্রী হিসেবে তার বহুল প্রচারিত কাজের জন্য ও সম্প্রতি তথ্যচিত্রে অংশ নেওয়ার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। তার সে আশঙ্কাই সত্যি করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন এই আলোকচিত্রী ও যোদ্ধা।