Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

আকাশ থেকে নেমে আসা যেন এক মেম- সুচিত্রা সেন

সুচিত্রা সেন । ছবি: সংগৃহীত

কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই- গানের সেই রমা কী কোনও আসল চরিত্র? মান্না দের গানের সব চরিত্র নাকী আধেক কাল্পনিক- আধেক বাস্তব। আর সেই রমাই ২০১৪ সালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া সুচিত্রা সেন।

তার আসল নামও রমা! রমা দাশগুপ্ত। বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে রমা কলকাতা হয়ে ভারতের মহানায়িকা। এই মহানায়িকার অভিমান- একরোখা ভাব আর পরিশ্রমের কাছে ধামাচাপা পড়ে গেছে তার প্রায় তিন যুগের অন্তর্ধান। আজকে চিত্রালী জানাবে মহানায়িকার কিছু গল্প যা সচরাচর আড্ডার বিষয় হয়ে উঠেনি।

১৯৭৮ থেকে ২০১৪- প্রায় তিনটি যুগ স্বেচ্ছায় অন্তরালে বসবাস করেন সুচিত্রা সেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাত্র দুইবার জনসমক্ষে এসেছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালে উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর এবং ১৯৮৯ সালে তার আধ্যাত্মিক গুরু ভারত মহারাজের মৃত্যুর পর।

প্রচলিত আছে, দর্শকের স্বপ্নের নায়িকা হিসেবেই তিনি বিদায় নিতে চেয়েছেন, তাই বৃদ্ধকালে পরিবার ছাড়া আর কারো সামনে আসতে চাননি।

২০০৫ সালে তাকে ভারতের সিনেমায় সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’-এ ভূষিত করা হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী দিল্লিতে গিয়ে জনসমক্ষে পুরস্কারটি নিতে হবে বিধায় তিনি এটি প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুচিত্রা সেন। তার আসল নাম রমা দাশগুপ্ত। বিয়ে নাকী ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়- এমন কথা আজও প্রচলিত থাকলেও, সে সময়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই বিয়ে করেন সুচিত্রা। আর ২১ বছর বয়স থেকে শুরু হয় অভিনয় জীবন।

তার প্রথম ছবির নাম ‘শেষ কোথায়’। তবে এটি মুক্তি পায়নি। ১৯৫৩ সালে প্রথমবার পর্দায় দেখা যায় সুচিত্রা সেনকে। ছবির নাম ‘সাত নম্বর কয়েদি’। একই বছর তার অভিনীত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিটি মুক্তি পায়। যেখানে নায়ক হন উত্তম কুমার।

কলকাতায় জয় শেষে ১৯৫৫ সালে দেবদাসের পার্বতী হয়ে বলিউডে হৈ চৈ ফেলে দেন যেন সুচিত্রা। আঁধির পরে তো আরো শোরগোল- সবাই চায় সুচিত্রাকে সিনেমায় নিতে। রাজ কাপুরও চেয়েছিলেন।

তবে রাজ কাপুরের সিনেমার প্রস্তাব তৎক্ষণাৎ না করে দিয়েছিলেন তিনি। একটি আলাপে তিনি বলেছিলেন, “পুরুষদের সৌন্দর্য আমি দেখি না। দেখি বুদ্ধিমত্তা এবং বাচনভঙ্গি। একবার আমার বাড়িতে এসেছিলেন রাজ কাপুর। একটা সিনেমার লিড রোলে আমাকে কাস্ট করবেন, সেই প্রস্তাব নিয়ে। আমি চেয়ারে বসতে যেতেই, আচমকাই আমার পায়ের নিচে এসে বসে পড়েন উনি।”

আর তাতেই বিগড়ে যায় সুচিত্রার মন। লিড চরিত্রের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। সুচিত্রা বলেন, “আমার পায়ের সামনে বসে যে আচরণ করেছিলেন, তা ভালো লাগেনি।”

যেমন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন উত্তম কুমারকেও। তাদের পর্দার রসায়ন যে পর্দার বাইরেও ছিল সেই রটনার সুবাতাস আজও কলকাতার স্মৃতিমাখা রাস্তায় দোল দিয়ে যায়।

সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার । ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্রে সুচিত্রা সেনকে সবাই মিসেস সেন বলে সম্বোধন করলেও উত্তম কুমার ‘রমা’ বলে ডাকতেন। আর সুচিত্রা উত্তমকে ডাকতেন ‘উতো’ বলে। সুচিত্রার স্বামী দেবানাথ ও উত্তমের স্ত্রী গৌরি দেবীও উষ্মা প্রকাশ করেছেন নানা সময়ে। তবে শোনা যায়, সুচিত্রা উত্তমকেও ফিরিয়ে দেন তাদের সমাজে ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’র গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে।

বিয়ে হয়েছিল কিনা গোপনে তা আজও গোপনে যেমন – তেমনই গোপন সুচিত্রার অন্তর্ধান ও সিনেমা ছাড়ার কারণ। কেউ বলেন উত্তমের অকাল প্রয়াণ, কেউ বলেন ১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিটি দর্শক ভালোভাবে না নেওয়ায় সুচিত্রা সেন সিনেমাকে বিদায় জানান। কেউ আবার বলেন নিজের বার্ধক্যকে লোকচক্ষুর সামনে আসতে দিতে নারাজ ছিলেন সুচিত্রা।

যে শিল্পী সত্যজিৎ রায়ের মত নির্মাতাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন, শুধুমাত্র শর্ত মানেননি বলে। ‘চৌধুরানী’ সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত বানাননি সত্যজিৎ। যাকে একটা সময় যখন গোটা বাংলা ইন্ডাস্ট্রি ম্যাডাম তকমায় সম্মান দিলেও বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক গুলজার তাকে ‘স্যার’ বলে সম্মান দিতেন। যিনি উত্তম কুমারের চাইতে বেশি নিতেন পারিশ্রমিক, এমনকী ছবির পোস্টারে তার নাম নায়কের চেয়ে বড় ‘ফন্টে’ চাইতেন- সেই সুচিত্রা সেন আসলেই তো আকাশ থেকে নেমে আসাই মেম। কারণ এমন নারীর অর্জন আর গর্জন ক’জন দেখেছেন ফিল্মি পাড়ায়?

পাবনার রমা দেবী, বাসার কৃষ্ণা, ফিল্মের মিসেস সেন – দর্শকের প্রিয় সুচিত্রা এভাবেই ছিলেন, থাকবেন ইতিহাসে, আজীবন।

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

৩৬-২৪-৩৬: বিনোদন নাকি বাস্তবতার গল্প?

তথাকথিত সমাজে বর্তমানে একটা মেয়ে সুন্দর হয়ে ওঠে তার শরীরের গঠনে। আর নারীর শরীরের সেই পার্ফেক্ট গঠনের নির্দিষ্ট…
0
Share